ঢাকা, ১৯ জুলাই ২০২৫: গত বছর জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় দেশের ১৭টি কারাগারে নজিরবিহীন হামলা ও বন্দি বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় জঙ্গি থেকে শুরু করে সব শ্রেণির বন্দিরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে কারারক্ষীরা গুলি চালান। এতে গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি ও জামালপুর কারাগারে ১৩ জন বন্দি নিহত হন এবং ২৮২ জন কারারক্ষী আহত হন। ওই সময়ে পাঁচটি কারাগার থেকে দুই হাজারের বেশি বন্দি পালিয়ে যান, যার মধ্যে প্রায় ৭০০ বন্দি এখনও পলাতক রয়েছেন, যাদের মধ্যে ৯ জন দুর্ধর্ষ জঙ্গি এবং ৭০ জন বিচারাধীন জঙ্গি অন্তর্ভুক্ত।
কারা সূত্র জানিয়েছে, নরসিংদী, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, শেরপুর এবং গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে এই বন্দিরা পালিয়ে যান। বিশেষ করে, গত বছর ১৯ জুলাই নরসিংদী কারাগারে হামলা ও বিদ্রোহের ঘটনায় ৮২৬ জন বন্দি পালিয়ে যান। এরপর ৫ আগস্ট বিটিভিতে শেখ হাসিনার দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার সংবাদ দেখে বেশ কিছু কারাগার থেকে বন্দিরা পালাতে বিক্ষোভ শুরু করেন। ৬ থেকে ৮ আগস্টের মধ্যে সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, শেরপুর ও গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে আরও প্রায় ১২শ’ বন্দি পালিয়ে যান। ওই সময়ে কারাগার থেকে অস্ত্র, গোলা-বারুদ, এমনকি চাল-ডাল পর্যন্ত লুট করা হয়। খোয়া যাওয়া ৯২টি অস্ত্রের মধ্যে এখনও ২৭টি উদ্ধার হয়নি।
সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি ও জামালপুর কারাগারে। ৮ আগস্ট কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে বন্দিরা বিদ্রোহ করে গেট ভেঙে ও দেয়াল টপকে পালানোর চেষ্টা করলে কারারক্ষীদের গুলিতে ছয়জন বন্দি নিহত হন। এরপরও কারাগারটি থেকে ২০৯ বন্দি পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। একই দিন জামালপুর কারাগারে বন্দিদের বিদ্রোহে কারারক্ষীদের গুলিতে সাতজন বন্দি নিহত হন।
এই নজিরবিহীন ঘটনার পর দেশের সব কারাগারে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ভবিষ্যতে বন্দিদের পালিয়ে যাওয়া রোধ করতে দেশের সব কারাগারের সীমানাপ্রাচীর আরও উঁচু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, পলাতক বন্দিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।